সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বড় দুর্নীতি হল SSC অর্থাৎ স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২৬ হাজার চাকরি দুর্নীতি। এই দুর্নীতির মামলা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ থেকে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে চূড়ান্ত হয়েছে। এই নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী সহ একাধিক নেতা-মন্ত্রী -অফিসার গ্রেপ্তার হয়েছে। দুর্নীতির কারণে ২০১৬ সালে SSC দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত নির্দেশে সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে।
আদালতের চূড়ান্ত রায়ে চিহ্নিত ও দায়ী শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা এই নিয়োগ অংশগ্রহণ করতে পারবে না। শুধুমাত্র অচিহ্নিত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরায় এই নিয়োগে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। আদালতের নির্দেশে শুধুমাত্র অচিহ্নিত শিক্ষক ও শিক্ষকরা আগামী ৩১ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাদান করতে পারবেন। তারমধ্যে সমস্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করবে রাজ্য SSC, এমনকি রাজ্য সরকার, স্কুল শিক্ষাদপ্তর ও SSC – এর করা রিভিউ পিটিশন বাতিল করেছে সুপ্রিম আদালত। এমনকি দুর্নীতিগ্রস্ত অযোগ্যরা যাতে এই পরীক্ষায় বসতে না পারে সেই বিষয়টি সুনিশ্চিত করার জন্য SSC -কে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য বিচারক।
তারপরই এসএসসি কর্তৃপক্ষ নতুন করে ক্লাস ৯-১০ এবং ক্লাস ১১-১২ এর শিক্ষক নিয়োগের নোটিফিকেশন প্রকাশ করে। সেখানে ২০১৬ সালের চিহ্নিত অযোগ্যরা বাদে সমস্ত প্রার্থী আবেদন করে। সেই সঙ্গে নতুন চাকরিপ্রার্থীদেরও আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়। SSC- এর পূর্ব নির্দেশ মতো গত ৭ই সেপ্টেম্বর রাজ্য জুড়ে অনুষ্ঠিত হয় ক্লাস ৯-১০ এর শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের পরীক্ষা। স্বচ্ছ ও দূর্ণিতিহীন ভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার জন্য একাধিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে SSC ও রাজ্য সরকার। কড়া নিরপত্তার জন্য প্রতিটি সেন্টারে CCTV ক্যামেরা, পুলিশি পাহারা, মেটাল ডিটেক্টর, পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা ভাবে চেকিং, প্রতিটি এক্সাম রুমে ঘড়ি, পানীয় জল ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়। এমনকি প্রতিটি পরীক্ষার্থীদের জন্য কমিশন থেকে স্বচ্ছ পেন ও OMR সিটের কার্বন কপি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:- ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করলে কি কি সুবিধা পাওয়া যায়? জেনে নিন এখনই।
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী মাননীয় ব্রাত্য বসু জানান, ৭ই সেপ্টেম্বর যেভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে, আগামী ১৩ই সেপ্টেম্বর ঠিক একই ভাবে ক্লাস ১১-১২ এর শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পুজোর পরে এই দুই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবে। ডিসেম্বরের আগেই ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শেষ করে ফাইনাল মেরিট লিস্ট প্রকাশিত হবে। আদালত নির্দেশিত ৩১ ডিসেম্বরের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই নতুন শিক্ষকরা স্কুলে শিক্ষাদানের কাজ শুরু করবেন।
অন্যদিকে, শিক্ষাকর্মী নিয়োগের গেজেট প্রকাশিত করেছে সরকার। সেখানে SSC দ্বারা স্কুলের গ্রুপ C ও D কর্মী নিয়োগ করা হবে । এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন ২০১৬ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত চিহ্নিত দাগী প্রার্থীরা বাদে সকল আবেদনকারীরা। সেই সঙ্গে নতুন পরীক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। আগামী ১৩ই সেপ্টেম্বর থেকে এই নিয়োগের আবেদন শুরু হবে। এই আবেদনপত্র গ্রহণ চলবে পুরো বাকি সেপ্টেম্বর ও গোটা অক্টোবর মাস জুড়ে। নতুন বছরের আগেই গ্রুপ C এবং গ্রুপ D পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার মতোই কড়া নিরপত্তার ও স্বচ্ছতার সাথে এই শিক্ষাকর্মী নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগেই এই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবে এবং ইন্টারভিউয়ের পর চূড়ান্ত মেরিট লিস্ট প্রকাশিত হবে। আদালতের নির্দেশমতো এই পরীক্ষা গুলি অনুষ্ঠিত করার জন্য যথেষ্ট ব্যস্ততা এখন SSC দপ্তরে। আর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীরা। এমনকি রাজ্য তথা দেশের মানুষেরও নজর এই গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া দিকে।