দেশের রাজ্য রাজনীতি উত্তাল ভোটার তালিকার SIR অর্থাৎ স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন নিয়ে। ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন অর্থাৎ বিশেষ নিবিড় সংশোধনী নিয়ে কেন্দ্র সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ঝড় তুলেছে বিরোধীরা। বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে SIR তালিকার কাজ সম্পূর্ণ করেছে নির্বাচন কমিশন। সেখানে কয়েক লক্ষ ভোটার বাদ পড়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মৃত ব্যক্তি ও ডুপ্লিকেট কার্ড। কিন্তু ঐ তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন অনেক বৈধ ভোটার। সেই নিয়েই বিতর্ক গোটা দেশ জুড়ে। ভোটার তালিকার SIR নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। শুধু বিহার নয়, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে বাংলাতেও SIR হতে চলেছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশন এই SIR এর জন্য রাজ্যের BLO অর্থাৎ বুথ লেভেল অফিসারদের প্রশিক্ষণ শুরু করেছে। কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হতে চলেছে রাজ্য জুড়ে ভোটার তালিকা সংশোধন।
SIR-এর জন্য প্রয়োজনীয় নথি:- SIR নিয়ে বিতর্কের মূল কারণ হল নথি। ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড ও রেশন কার্ড গ্রাহ্য হবেনা । নির্বাচন কমিশন নির্দেশিত গ্রহণযোগ্য ডকুমেন্টস গুলি হল – নাগরিকত্বের প্রামাণ্য নথি হিসাবে নির্বাচন কমিশন মোট ১১টি নথির উল্লেখ করেছে। সেই সঙ্গে, ঐ ১১টি নথির একটাও না থাকলে ২০০২ সালে রাজ্যের SIR- এর ভোটার তালিকায় নিজের অথবা বাবা কিংবা মায়ের নাম উল্লেখ থাকতে হবে। ঐ নির্দিষ্ট ১১টি ডকুমেন্টস হল –
১) রাজ্য সরকার অথবা কেন্দ্র সরকার কিংবা পাবলিক সেক্টর ইউনিট দ্বারা প্রদত্ত পরিচয় পত্র অথবা পেনসেন কার্ড।
২) ১৯৮৭ সালের আগে কেন্দ্র অথবা রাজ্য সরকার কিংবা ভারতীয় পোস্ট অফিস – LIC – ব্যাংকের পরিচয় পত্র।
৩) বার্থ সার্টিফিকেট।
৪) স্থায়ী বাসিন্দা প্রমাণপত্র।
৫) মাধ্যমিক পাশ সার্টিফিকেট।
৬) বন অধিকার পত্র।
৭) কাস্ট সার্টিফিকেট(SC,ST এবং OBC)।
৮) NRC সার্টিফিকেট।
৯) সরকারের দেওয়া জমি বা বাড়ির কাগজ।
১০) পরিবার রেজিস্ট্রেশন কার্ড।
১১) পাসপোর্ট।
আরও পড়ুন:- পুজোর আগে মুখ্যমন্ত্রীর নতুন প্রকল্প শ্রমশ্রী। কিভাবে আবেদন করবেন?
এই ১১টি ডকুমেন্টস ছাড়াও ২০০২ সালের ভোটার লিস্ট নথি হিসাবে গৃহীত হবে। কোন ভোটারের জন্ম যদি ১৯৮৭ সালের আগে হয় , তাহলে ২০০২ সালের SIR ভোটার তালিকায় নাম উল্লেখ থাকলে সেই পেজ জমা দিলেই হবে। যদি ঐ তালিকায় নাম না থাকে তাহলে ঐ ১১টি নথির মধ্যে যে কোন একটি ডকুমেন্ট গ্রহণযোগ্য হবে। যদি কোন ভোটারের জন্মসাল ১৯৮৭ থেকে ২০০২ সালের মধ্যবর্তী হয় , তাহলে ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে ঐ ভোটারের নাম উল্লেখ থাকতে হবে অথবা তার পিতা কিংবা মাতা যে কোন একজনের নাম ঐ তালিকায় উল্লেখ থাকতে হবে। সেই উল্লেখিত পেজ BLO – এর কাছে জমা করলেই হবে। যে ভোটারের জন্মসাল ২০০২- এর পরে তাদের ক্ষেত্রে ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে পিতামাতা উভয়ের নাম উল্লেখ থাকতে হবে। সেই উল্লেখিত পেজ বুথ লেভেল অফিসারের কাছে জমা করতে হবে । যদি বাবা ও মা দুজনের নাম ঐ তালিকায় উল্লেখ না থাকে তাহলে ঐ ভোটারকে উপরের নির্দিষ্ট ১১টি ডকুমেন্টসের মধ্যে যে কোন একটি জমা করতে হবে।
ইতিমধ্যেই জাতীয় নির্বাচন কমিশন তাদের অফিসিয়াল সাইটে ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে তালিকা প্রতিটি বুথ অনুযায়ী আপলোড করেছে। এই তালিকা ডাউনলোড করে দেখে নিন নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নাম উল্লেখিত আছে কিনা। যদি ঐ তালিকায় নিজের কিংবা পিতামাতার নাম উল্লেখ না থাকে তাহলে ঐ নির্দিষ্ট ১১টি নথির যে কোন একটি জোগাড় করে রাখুন। এই বিষয়ে আরও জানতে নিজের বুথের BLO – এর সাথে যোগাযোগ করুন।
SIR নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। যদিও দেশের সর্বোচ্চ আদালত নির্বাচন কমিশনকে এই নথির তালিকায় আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড এই দুটিকে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করেছে। নির্বাচন কমিশন এই সম্পর্কিত কোন সিদ্ধান্ত এখনও গ্রহণ করেনি। একদিকে বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে সরকার ও কমিশনের উপর চাপ বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গে SIR শুরু করার তোড়জোড় শুরু করেছে। তবে, SIR নিয়ে গোটা দেশ তাকিয়ে আছে সর্বোচ্চ আদালতের দিকে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হিসাব গৃহীত হবে।তাই অযথা আতঙ্ক নয়, ঐ নির্দিষ্ট ডকুমেন্টস হাতের কাছে রাখুন।