আগস্ট মাস শেষ করে সেপ্টেম্বর মাসে পদার্পণ। এবছর সেপ্টেম্বর মাস হল পুজোর মাস। বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। ইতিমধ্যেই শিউলি ফুলের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে, প্রান্তর জুড়ে কাশ ফুলের মেলা চারিদিকে, মাঝে মাঝেই সাদা মেঘের ভেলা আকাশ জুড়ে। তার সাথে তাল মিলিয়ে দুর্গাপুজোর গন্ধ আসছে বাঙালির নাকে। সারাবছর এই উৎসবের দিকে তাকিয়ে থাকে গোটা বাংলা। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সাথে রাত জেগে ঠাকুর দেখার আশায় প্রহর গুনছে গোটা বাংলার মানুষ।
কিন্তু এবারের দুর্গাপুজোয় কি বৃষ্টিসুরের আগমন ঘটবে? বৃষ্টি কি দুর্গোৎসবের আনন্দ কাদা করবে? এই নিয়েই প্রশ্ন ঘুরছে সমাজ মাধ্যমে ও হাটে-বাজারে। সারাদেশে এবছর বর্ষা রেকর্ড মাত্রায় হয়েছে। দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সাধারণ নিয়মে জুন মাসেই প্রবেশ করেছে ভারতের মূল ভূখণ্ডে। তারপর থেকে একটানা বৃষ্টি চলছে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। কেরালা, মহারাষ্ট্র, উত্তরাখণ্ড , কাশ্মীর, অসম ও পশ্চিমবঙ্গ সব রাজ্যই বন্যায় ভেসেছে। সারা ভারতের মতোই এবছর বাংলায় বৃষ্টি স্বাভাবিকের থেকে বেশী হয়েছে। কয়েক দশকের থেকে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে এবছর। কোন কোন সপ্তাহে সূর্যি মামার মুখ একবারও দেখেনি বঙ্গবাসী। বর্ষার মেঘের সাথেই বারবার নিম্নচাপ ও মেঘের আনাগোনার কারণে ভেসেছে বাংলার ভূমি। বৃষ্টিতে ভিজে নাজেহাল মানুষ। বৃষ্টির জমা জলে পথ- ঘাটের অবস্থা বেহাল। বিরক্ত হয়ে উঠছে মানুজন। আর সবার মনে একটাই প্রশ্ন পুজোতেও কি বিরক্তির বৃষ্টি কাল করবে মানুষের উৎসবের মেজাজ।
তবে মৌসম ভবনের পূর্বাভাস স্বস্তি দিতে পারছে না বাঙালির উৎসব প্রেমী মনকে। মৌসম ভবন জানিয়েছে এবছর সেপ্টেম্বর মাসেও স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টিপাত হবে। গোটা দেশে সেপ্টেম্বর মাসেও ১০০% এর বেশি বৃষ্টিপাত হবে। উত্তর ভারত, পশ্চিম ভারত, দক্ষিণ ভারত ও পূর্ব ভারতও ভাসতে পারে অতি বৃষ্টিতে। এবছর দুর্গাপুজো অনেকটা এগিয়ে এসেছে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষেই শুরু দুর্গাপুজো। অথচ সমগ্র দেশ থেকে বর্ষা বিদায় ঘটবে সেপ্টেম্বর মাসের পর। এবছর ২১ শে সেপ্টেম্বর মহালয়া অর্থাৎ দেবী পক্ষের সূচনা। ২৮ শে সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী এবং ২ রা অক্টোবর মহাদশমী। পুজোয় বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস সম্পূর্ণ ভাবে না দিলেও। সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে বৃষ্টির আগাম পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর।
আরও পড়ুন:- ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০% ট্যারিফ ট্রাম্পের। কি প্রভাব পড়বে ভারতের উপর?
সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ জুড়ে ওড়িশা উপকূলে নিম্নচাপের কারণে বাংলায় বৃষ্টির প্রভাব বাড়বে। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিম্নচাপের সম্ভবনা না থাকলেও মাঝে মাঝে বৃষ্টিতে ভিজবে দক্ষিণবঙ্গ। সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পুজোর সময় সমগ্র উত্তর ভারতের সাথে বাংলাতেও বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। পরের সপ্তাহ অর্থাৎ মহালয়ার সপ্তাহে ভারত থেকে বর্ষা বিদায় শুরু হবে। কিন্তু সেই সময় পূর্ব ভারতে ব্যাপক বৃষ্টির সম্ভবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। তবে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ ও অক্টোবর মাসের শুরুতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। তবে একবারেই যে বৃষ্টি হবেনা তার নিশ্চয়তা দিতে পারেনি মৌসম ভবন। অর্থাৎ দুর্গাপুজোর দিন গুলিতে বঙ্গজুড়ে ভারী বৃষ্টি না হলেও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভবনা থেকেই যাচ্ছে। যদিও আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের অধিকর্তা জানিয়েছেন, দুর্গাপুজোকে এখনও প্রায় ২৫ দিন দেরি আছে। তাই এত তাড়াতাড়ি পূর্ভাবাস দেওয়া সম্ভব নয়। মহালয়ার সময় জানিয়ে দেওয়া হবে দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে বাংলার ওয়েদার কেমন থাকবে।
দুর্গাপুজোর দিন গুলিতে বৃষ্টি হলে দুর্গাপুজোর অনুষ্ঠানে ছেদ পড়বে। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ভিড় কমতে পারে। পুজো উদ্যোক্তদের সারা বছরের প্রচেষ্টাতে জল ঢালা হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে মণ্ডপের সামনে কিংবা রাস্তায় খুচরো ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হবে। বৃষ্টির কারণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত করার সমস্যা হলে শিল্পীদের রুজিতে টান পড়বে। দুর্গাপুজোর দিকে তাকিয়ে থাকা ঢাকি, ডেকরেটার্স, সাউন্ড ও লাইট সমস্ত কর্মীদের ক্ষতি হবে। অন্যদিকে পুজোর আগের সপ্তাহে ভারী বৃষ্টির সম্ভবনাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পুজোর কেনাকাটা। পোশাকের দোকান থেকে গহনার দোকান সকলেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে। অন্য দিকে পুজোর আগে বৃষ্টি হলে মৃৎশিল্পী ও প্যান্ডেল শিল্পীরাও সমস্যায় পড়বেন। সেই কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হবেন পুজো উদ্যোক্তরা।।
তাই পুজোর আগে কিংবা পুজোর নির্দিষ্ট কটাদিন বৃষ্টির পূর্বাভাস নিয়েই গুঞ্জনা চলছে চারিদিকে। তবে বৃষ্টি যে বাঙালির উৎসবে বিরাট প্রভাব ফেলতে পারবে না তার প্রমাণ অতীতেও পাওয়া গেছে। উৎসবমুখর বাঙালি ছাতা মাথায় কিংবা বর্ষাতি গায়ে দিয়ে রাত জেগে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে ঠাকুর দেখার নির্দশন অতীতেও রেখেছে।