মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় এসে একাধিক জনমুখী প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন। প্রকল্প গুলিতে উপকৃত হচ্ছেন রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষ। এই প্রকল্প গুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কন্যাশ্রী প্রকল্প। রাজ্য সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তরের অধীনে এই প্রকল্প। ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়।
এই প্রকল্পের সুবিধা:- কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের বালিকাদের শিক্ষাক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। রাজ্যের অষ্টম শ্রেণিতে পাঠরত ছাত্রীরা পড়াশুনা অব্যাহত রাখার জন্য বার্ষিক ১০০০ টাকা করে পান। আবার, ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর ঐ ছাত্রী যদি অবিবাহিত অবস্থায় পড়াশুনা চালিয়ে যান, তাহলে তিনি এককালীন ২৫০০০ টাকা পাবেন। এই টাকা ঐ ছাত্রীরা ব্যাংক একাউন্টে সরাসরি জমা করা হয়। এই আর্থিক সহযোগিতার দ্বারা ছাত্রীরা নিজেদের পড়াশুনার খরচ চালাতে পারবেন। এই ২৫০০০ টাকার আর্থিক সাহায্য ছাত্রীরা নিজেদের উচ্চ শিক্ষার খরচ চালাতে পারবেন।
এই প্রকল্পে আবেদনের জন্য যোগ্যতা:- আবেদনকারীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। আবেদনকারী অবশ্যই বালিকা বা কিশোরী হবেন। আবেদনকারীর বয়স ১৩- ১৮ বছরের মধ্যে হতে হবে। আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলার রাজ্য সরকার স্বীকৃত স্কুল-কলেজের ছাত্রী হতে হবে। এই প্রকল্পে আবেদনকারীর পারিবারিক ইনকামের ঊর্ধ্বসীমা বর্তমানে নেই।
আরও পড়ুন:- ট্রাফিক আইন ভাঙলে কোন ক্ষেত্রে কত জরিমানা দিতে হয়? জেনে নিন এখনই
এই প্রকল্পে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি:- আবেদনকারীর আধার কার্ড, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রী হিসাবে প্রমাণপত্র, বয়সের প্রমাণপত্র, আবিবাহিত থাকার প্রমাণপত্র, সর্বশেষ পরীক্ষার মার্কসশিট, ব্যাংকের একাউন্ট ও মোবাইল নং।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রকারভেদ:- এই প্রকল্পকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। K১- ১৮ বছরের নিচের ছাত্রীদের জন্য। K২- ১৮ বছরের ছাত্রীদের জন্য। এই বিভাগের জন্যই ২৫০০০ টাকার এককালীন সুবিধা পাওয়া যায়। K-৩ – বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠরত ছাত্রীদের জন্য, যারা আগে K১ অথবা K২ বিভাগের সুবিধা পায়নি।
এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য:- নারী ক্ষমতায়ন হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য। এই প্রকল্প বাংলার লক্ষ লক্ষ মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় অনুপ্রেরণা দেয়। শিক্ষিত হলেই রাজ্যের নারী সমাজের আসল উন্নতি ঘটবে। এই প্রকল্পের পিছনে অন্যতম আসল উদ্দেশ্য হল মেয়েদের বাল্যবিবাহ বন্ধ করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নারী সমাজের উন্নতির ঘটিয়ে ভবিষ্যতের মা ও তার শিশুকে সুরক্ষিত করা।
এই প্রকল্পে গুরুত্ব:- কন্যাশ্রী প্রকল্পের গুরুত্ব গোটা দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের কাছে পৌঁছে গেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে একাধিক পুরস্কার পেয়েছে এই প্রকল্প। রাজ্যের লক্ষ লক্ষ ছাত্রীদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে এই প্রকল্প। বাংলার কয়েক লক্ষ ছাত্রী এই প্রকল্পের দ্বারা উপকৃত হয়েছেন। এই আর্থিক সাহায্যকে কাজে লাগিয়ে অনেক ছাত্রী পড়াশুনার দ্বারা নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন। তারা ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, ফার্মেসি, নার্সিং, ম্যানেজমেন্ট, সিভিল সার্ভিস, শিক্ষিকা ও অফিসার সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের নাম উজ্জ্বল করেছে।
শুধু আর্থিক সাহায্য নয়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের ছাত্রীদেরকে ক্রীড়া-সংস্কৃতি ক্ষেত্রের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রাজ্যের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর ১৪ই আগষ্ট কন্যাশ্রী দিবস পালন করা হয়। ঐ দিন রাজ্যজুড়ে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রকল্পের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে রাজ্য সরকার নদিয়া জেলাতে মহিলাদের জন্য কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে। যেখানে প্রতিবছর কয়েকশো বাংলার মেয়েরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে।
এই প্রকল্পে আবেদনের পদ্ধতি:- এই প্রকল্পে আবেদন করতে হবে নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে K-১, K-২ এবং K-৩ প্রয়োজন মতো ফর্ম ফিলাপ করা যাবে। নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই ব্যাপারে ছাত্রীদের সাহায্য করবে। আবেদন করার সময় নির্দিষ্ট নথি গুলি সঠিক ভাবে দিতে হবে। প্রতিবছর মার্চ মাসে এই প্রকল্পে আবেদন শুরু হয়। এই প্রকল্পে আবেদন করার জন্য নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করুন। এই প্রকল্প সম্পর্কে আরও জানতে নিচের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট:- Link