মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনমুখী প্রকল্প গুলির মধ্যে একটি হল তরুণের স্বপ্ন প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী ট্যাব বা মোবাইল কেনার টাকা পান। ২০২০ সালে করোনা মহামারীর সময় চলছিল লকডাউন। দেশজুড়ে বন্ধ ছিল স্কুলের পঠনপাঠন। করোনা মহামারীর ধাক্কায় স্কুল খুলতে খুলতে ২০২২ সাল চলে আসে। এই দীর্ঘ সময় ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার একমাত্র মাধ্যম ছিল অনলাইন এডুকেশন। কিন্তু রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর অন্তর্গত পড়ুয়ারা মোবাইল বা ট্যাবের অভাবের জন্য অনলাইন পড়াশুনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। তখন এই বিষয়টি সামনে আসে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর।
রাজ্যসরকার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্যের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীদের অনলাইন পড়াশুনার জন্য মোবাইল অথবা ট্যাব কেনার জন্য আর্থিক সাহায্য করা হবে। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বিখ্যাত বই তরুণের স্বপ্ন এর নামে। সেই থেকেই প্রতি বছর এই প্রকল্পে উপকৃত হচ্ছেন রাজ্যের পড়ুয়ারা। তবে গত বছর এই প্রকল্পে জালিয়াতির একাধিক অভিযোগ উঠে। এই প্রকল্পে দুর্নীতি রুখতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এবছর ট্যাব বা মোবাইল কেনার টাকা দেওয়া শুরু করল রাজ্য সরকার। পুজোর আগেই রাজ্যের স্টুডেন্টদের ব্যাংক একাউন্টে এই প্রকল্পের টাকা জমা হয়ে যাবে।
এই প্রকল্পের সুবিধা গুলি হল:- এই প্রকল্পের অধীনে রাজ্যের পড়ুয়ারা ১০ হাজার টাকা করে পাবেন। এই টাকা তারা মোবাইল অথবা ট্যাব কেনার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। এই ট্যাব বা মোবাইল তারা অনলাইন পড়াশুনার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:- দরজায় কড়া নাড়ছে দুর্গাপুজো। পুজোয় কদিন ছুটি পাবেন কর্মীরা?
এই প্রকল্পে আবেদনের যোগ্যতা:- আবেদনকারীকে অবশ্যই রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। আবেদনকারীকে অবশ্যই রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের পড়ুয়া হতে হবে। শুধুমাত্র একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা আবেদন করতে পারবেন। পূর্বে শুধুমাত্র দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা আবেদন করতে পারতেন। এখন একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়ারাও আবেদন করতে পারেন। আবেদনকারী পড়ুয়ার পরিবারের বার্ষিক ইনকাম অবশ্যই ২ লাখ টাকার নিচে হতে হবে।
এই প্রকল্পে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি:- আবেদনকারীর আধার কার্ড, বাসিন্দা প্রমাণপত্র, মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড ও মার্কশিট, ছাত্র-ছাত্রীর প্রমাণপত্র, পাসপোর্ট সাইজ ফটো, ব্যাংক একাউন্টের পাশবুক, মোবাইল নং, মোবাইল কেনার পর রশিদ জমা করতে হবে এবং টাকা নেওয়ার পর পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার ডিক্লারেশন বা মুচলেখা দিতে হবে।
এই প্রকল্পের গুরুত্ব:- তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের পিছনে রাজ্য সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য আছে। এই প্রকল্পের দ্বারা রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের অনলাইন পড়াশুনার জন্য সাহায্য করা হয়। এই প্রকল্পের দ্বারা স্কুল স্তরে ডিজিটাল শিক্ষার প্রসারে উৎসাহ দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের দ্বারা রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষায় উৎসাহ দেওয়া হয়। উচ্চশিক্ষা স্কুলছুটে সংখ্যা কমানো হল এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। যদিও এই প্রকল্প নিয়ে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। স্কুল স্টুডেন্টদের মোবাইল বা ট্যাবের কেনার টাকা দেওয়া হচ্ছে। অথচ অনেক স্টুডেন্ট অনলাইন পড়াশুনার বদলে এই মোবাইলের দ্বারা সোস্যাল মিডিয়া, রিলস, অনলাইন গেম , বেটিংএ আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ।
এমনকি ট্যাব কেনার টাকা ব্যাংক একাউন্টে পাওয়ার পর অনেকেই পড়াশুনা ছেড়ে বাইরের রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে কাজ করতে পালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা বাল্য বিবাহ করছে বলেও অভিযোগ। আর গত বছরই এই প্রকল্পে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির নিদর্শন পাওয়া গেছে। একশ্রেণীর শিক্ষাবিদের মতামত, সরকার ব্যাংক একাউন্টে টাকা না দিয়ে একটি বিশেষ কোম্পানির দ্বারা তৈরি লিমিটেড ব্যবহারযোগ্য মোবাইল ফোন বা ট্যাব দেওয়ার উদ্যোগ নিতে পারে। সেখানে শুধুমাত্র অনলাইন শিক্ষার ক্ষেত্রেই এই ট্যাব বা মোবাইল ব্যবহার করা যাবে। অন্য কোন সাইট এই ফোন থেকে খুলতে পারবে না।এই প্রকল্পের টাকা অপব্যবহার হবেনা।
এই প্রকল্পে আবেদনের পদ্ধতি:- শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের স্কুল থেকেই এই প্রকল্পের আবেদন করতে পারবেন। যে স্কুলে তারা একাদশ কিংবা দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন সেই স্কুলের দায়িত্ব এই প্রকল্পের আবেদন করে দেওয়া। ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল গিয়ে এই ফর্ম ফিলাপ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আবেদন করার কাজে ছাত্র-ছাত্রীদের সব সহযোগিতা করবেন। খুব সাবধানে আবেদন করাতে হবে। আবেদন পত্র ভুল থাকলে আবেদন বাতিল হতে পারে। এই প্রকল্পের সম্পর্কে আরও জানতে নিম্নলিখিত ওয়েবসাইটে কিংবা নিজের স্কুলে ভিজিট করুন।